• ঢাকা
  • শনিবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০ জুলাই, ২০২৩
সর্বশেষ আপডেট : ১০ জুলাই, ২০২৩

রংপুরে খাবারের ঐতিহ্য সুস্বাদু ‘সিঁদল’

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

সিঁদল। হঠাৎ করে এই নামটি শুনলে অপরিচিত মনে হতে পারে। কিন্তু সিঁদলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রংপুর অঞ্চলের খাবারের ঐতিহ্য। প্রাচীনকাল থেকেই সিঁদল রংপুর অঞ্চলের সুস্বাদু খাবার। যদিও বর্তমান প্রজন্মের কাছে সেভাবে পৌঁছেনি সিঁদলের স্বাদ।

রংপুর বিভাগের কমবেশি প্রতিটি পরিবারই সিঁদলের সঙ্গে পরিচিত। বিশেষ করে সিঁদল তৈরির সঙ্গে যে উপকরণ প্রয়োজন, তা যেন কারোই অপরিচিত নয়। এটি মূলত ছোট মাছের শুকনো শুঁটকি আর কচুর ডাটা দিয়ে তৈরি হয়। সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আদা, রসুন, হলুদ, সরিষার তেল, খাওয়ার সোডা আর এলাচও দিতে হয়।

এটি মূলত মলা, ডারকা বা পুঁটি জাতীয় বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছ দিয়ে তৈরি হয়। প্রথমে ছোট মাছগুলো ভালো করে ধুয়ে কুটে পরিষ্কার করে সপ্তাহখানেক কড়া রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করে নিতে হয়। পরে মাছের শুঁটকিগুলো ঢেঁকিতে নয়তো উরুনগান (বড় আকারের কাঠের হামানদিস্তা) বা শিল-পাটায় আধা ভাঙা অর্থাৎ আধা গুঁড়ো করে নিতে হয়। আবার ব্লেন্ডারেও শুঁটকি আধা ভাঙা করে নিতে পারেন।

শুঁটকি আধা ভাঙা করা শেষ হলে একই পরিমাণ সাদা মানকচু ও কালো কচুর শুধু ডাঁটা ধুয়ে নিয়ে কাঁচা অবস্থাতেই বাটতে হয়। কচু বাটার সঙ্গে মলা, ডারকা বা পুঁটি মাছের আধা ভাঙা গুঁড়া, প্রয়োজন মতো আদা, রসুন এবং কিছু পরিমাণ খাওয়ার সোডার মিশ্রণে ধীরে ধীরে সবকিছুর সঙ্গে মেশাতে হয়। সব মেশানো হয়ে গেলে হলুদ ও সরিষার তেল দিয়ে মেখে হাত দিয়ে গোল বা চ্যাপটা করে এক সপ্তাহ কড়া রোদে শুকাতে হয়। ডালা বা কুলায় জাল দিয়ে ঢেকে (যাতে কাক বা পাখি খেতে না পারে) শুকিয়ে এগুলো একটু শক্ত হয়ে গেলে তৈরি হয়ে যায় সিঁদল। অনেকে আবার মালা করে শুকিয়ে নেন। এভাবে তৈরি সিঁদল বহুদিন রেখে খাওয়া যায়।

সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্ট্য ও স্বাদের কারণে সিঁদল এ অঞ্চলের মানুষের একটি অতিপ্রিয় খাবার। এটি শীতকালে এবং বর্ষার মৌসুমে সকালের খাবারে গ্রামাঞ্চলে বেশি করে খেতে দেখা যায়।

সিঁদল তেলে ভেজে নিয়ে পরে প্রয়োজন মতো শুকনা মরিচ, রসুন, পেঁয়াজ, লবণ দিয়ে ভর্তা করে খাওয়া হয়। কোথাও কোথাও তেলে না ভেজে কলার পাতায় মোড়ানো সিঁদল চুলোয় পোড়ানো হয়। পরে কলার পাতা কালো রং ধারণ করলে সিঁদল বের করে প্রয়োজন মতো শুকনা মরিচ, রসুন, পেঁয়াজ, লবণ দিয়ে ভর্তা করা হয়।

এখনো গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারে সিঁদল বিক্রি হয়। জোড়া প্রতি সিঁদল ৪০-৫০ টাকা করে বিক্রি হয়ে থাকে। কোথাও আবার দুই জোড়া ৬০ টাকা। সাইজ, শুঁটকির ধরণ ও শুকানোর ওপর সিঁদলের দাম নির্ভর করে থাকে। তবে শহুরে জনপদে সিঁদল সহসাই পাওয়া যায় না।

মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ এলাকার বিটুল মিয়া বলেন, ‘হামরা বর্ষাকালে ছোট ছোট মাছ ধরি আগোত অইরোদ (রোদে) শুকাই, তারপর ঢেকিত ভাঙি নেই। পরে  ওসুন (রসুন), কচু বাটার সাথে মাছের ভাঙা গুঁড়া একসাথে করি। প্রয়োজন মতো আদা, ওসুন, সোডা একসাথে মাখিয়া হলুদ আর সরিষার তেল দিয়্যা গোল বা চ্যাপটা করি কড়া অইরোদ শুকাই। সিঁদল মেলাদিন থুয়্যা (অনেক দিন রেখে) খাওয়া যায়।’

পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের প্রতিপাল বগুড়াপাড়া গ্রামের আমজাদ হোসেন জানান, সিঁদল মূলত শীতকালে বেশি খেতে দেখা যায়। গরম ভাতের সঙ্গে সিঁদল ভর্তা খেতে ভীষণ ভালো লাগে।  এলাকার ঐতিহ্যগত কারণে অনেক সময় খাবার আয়োজনেও মেহমানদের সিঁদল দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এটা রংপুর জেলার মানুষের খাবারের ঐতিহ্য।

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন