• ঢাকা
  • শনিবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩ আগস্ট, ২০২৩
সর্বশেষ আপডেট : ৩ আগস্ট, ২০২৩

এটাই আমার শেষ দেখা হতে পারে-একুশে পদক পাওয়া মজিবর মাষ্টার

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

রংপুর শহর ছিল লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে টইটম্বুর। সড়কের কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাছ থেকে একনজর দেখতে দলে দলে এসেছিলেন সবাই। রংপুর জিলা স্কুল মাঠ উপচে জনতার জনস্রোতের ঢেউ বয়ে যায় সড়কের অলিগলি। এত মানুষের ভিড়ে হুইল চেয়ারে ভর করে বদরগঞ্জ থেকে এসেছিলেন ভাষাসংগ্রামী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মজিবর রহমান মাষ্টার।

জয়বাংলা স্লোগানে মুখরিত জনসমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে যেন তারুণ্যে ফিরেছিলেন ৯৫ বছর বয়সী মজিবর মাষ্টার। ঘামঝরা ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা তিনি পৌঁছেন সভামঞ্চে। বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, সর্বজন শ্রদ্ধেয় সংগ্রামী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা হুইল চেয়ারে সভামঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন। সেই মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিরাও।

বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া মজিবর রহমান মাষ্টার অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন মাঠ ভরা জনসমুদ্রের দিকে। বায়ান্নর ভাষা সংগ্রাম থেকে একাত্তরের রণাঙ্গনের উত্তাল দিনগুলোতে ডুব দিয়েছিল তাঁর মন। ভাবছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মাটি, মানুষের জন্য লড়াই করা দিনগুলোর কথা।

হঠাৎ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে এসে মজিবর মাষ্টারের সঙ্গে কথা বললেন। স্বভাবসুলভ আন্তরিকতায় তাঁর হাত ধরে জানতে চান খোঁজখবর। প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যতায় আবেগ আপ্লুত হন মজিবুর রহমান। মাথায় হাত রেখে মন খুলে দোয়া করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে। সৃষ্টি হয় শ্রদ্ধা, সম্মান আর ভালোবাসার এক অনন্য নজির। লাখ লাখ জনতা তখন রাষ্ট্রপ্রধানের উদার ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে জয়বাংলা স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা, সম্মান আর ভালোবাসার প্রদর্শনের অনন্য এই দৃশ্য এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। ভাষাসংগ্রামী, বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ মজিবর রহমান মাষ্টার আবার যেন আলোচনা। কারণ তিনি বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বহুবার দেখা করেছেন। জাতির পিতারকন্যা শেখ হাসিনার সাথেও বেশ কয়েকবার দেখা ও কথা হয়েছে তাঁর।

বুধবার (২ আগস্ট) সকালে যখন রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখতে বদরগঞ্জ থেকে হুইল চেয়ারে ছুটে এসেছিলেন মজিবুর রহমান মাস্টার, তখন তাঁর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাসমাবেশকে সফল করার জন্য আমি এসেছি। আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, আমার কোনো কষ্ট নেই। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আবারও শেখ হাসিনাকে দরকার।

ওইদিন মহাসমাবেশ শেষ করে রাতে বাড়ি ফিরে যান মজিবর রহমান মাষ্টার। তিনি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কুতবপুর ইউনিয়নের খিয়ারপাড়া গ্রামের সেরাজ উদ্দিনের ছেলে। এ বছর বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘একুশে পদক-২০২৩’ পেয়েছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মুঠোফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মহাসমাবেশের সভামঞ্চে তাঁকে সম্মানিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মজিবর রহমান মাস্টার। একই সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ভিশনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রচেষ্টার সফলতা কামনা করেন।

এই ভাষা সংগ্রামী বলেন, ১৯৫৫ সাল থেকে কয়েকবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের সাথে দেখা হয়েছে। তারপর শেখ হাসিনার সাথেও আমার অনেকবার দেখা হয়েছে। যখন বিয়ে হয়নি তখন থেকে দেখা হয়। খুব কাছ থেকে তাঁকে অন্তত ১৫-২০ বার দেখেছি। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসেও ঢাকায় একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, বুধবার বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়ার পরে আমার এটাই অনুভূতি, যখন বিয়ে হয়নি তখন থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে দেখছি। তিনি প্রধানমন্ত্রী হবার পরও কয়েকবার দেখলাম। আমি আর নাও দেখতে পারি এটাই আমার শেষ দেখা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী আমার মেয়ের মতো তাঁকে আমি কাছে পেয়ে দোয়া করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী যেন দেশ শাসনে  ভালো করতে পারে। তাঁর বাবার ডাকে যুদ্ধ করেছি আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী, এটাই তো আমাদের গর্ব।

মজিবর মাষ্টার বলেন, আল্লাহর কাছে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করছি, তিনি যেন আরো ভালো কাজ করতে পারেন। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে যেন একটা উন্নত দেশে পরিণত করতে পারেন একটাই আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ।

তিনি আরও বলেন, আমার একটা চাওয়া ছিল, সভামঞ্চে তাঁকে (প্রধানমন্ত্রী) বলেছি ২০২৪ সালে যেন স্বাধীনতা পুরস্কার পেতে পারি। উনার (শেখ হাসিনা) হাতে একুশে পদক পেয়েছি, এখন এটাই চাওয়াপাওয়া। আর বাংলাদেশটা যেন সোনার বাংলা হয় এটাই সবসময় কামনা করি।

মজিবর রহমান মাস্টার মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬ নম্বর সেক্টরে থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন সংগ্রাম করায় তাঁর নামে ওয়ারেন্ট হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণের পর মজিবর রহমান মাস্টার বদরগঞ্জে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। তিনি ওই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। আহ্বায়ক ছিলেন এমএলএ এলাহী বকস্ সরকার। পরবর্তীতে তাঁকে শ্যামপুর আঞ্চলিক সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক করা হয়েছিল।

মজিবর রহমান ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বদরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাকশাল গঠনের পর তিনি দীর্ঘদিন রংপুর জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বদরগঞ্জ শাখা টিসিসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় তিনি বদরগঞ্জের কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যনও ছিলেন।

মজিবর রহমান মাস্টার স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও যুদ্ধাপরাধী এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলায় সাক্ষী ছিলেন। তাকে বহুবার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তা উপেক্ষা করে তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ কারণে তিনি জামায়াত-শিবিরের হামলার শিকারও হন। মজিবর রহমান মাস্টারের গ্রামের পাশের গ্রামে এটিএম আজহারুল ইসলামের বাাড়ি।  ##

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন