• ঢাকা
  • শনিবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে খোকশা ঘাঘট

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

খোকসা ঘাঘট রংপুর শহরের সাতমাথায় শ্যামাসুন্দরী নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে পার্কের মোড়ের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ঘেষে মোট ১০ কি.মি. প্রবাহিত হয়ে মর্ডান মোড়ে ঘাঘট নদীর সঙ্গের মিলিত হয়েছে। নদীর পানি প্লাস্টিক পলিথিনের দূষণে একাকার হয়ে গেছে। বন্ধ হয়েছে জলপ্রবাহ, সৃষ্টি হয়েছে দুর্গন্ধ।

যার ফলে নদীর দুই তীরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেস ও বাসা বাড়ির জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। নগরীর পানি নিস্কাসনের এই খালটির একসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও এখন ময়লা আর্বজনার ভাগাড়। এডিসসহ মশা-মাছির প্রজনন কেন্দ্র ও নানা রোগ জীবাণুর উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। নগরের দায়িত্বে থাকা জনপ্রতিনিধিরা খালটি সংস্কারের বহুবার উদ্দ্যোগ নিলেও তা কখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তাছাড়াও প্রভাবশালীরাও নদী দখল করে রেখেছেন। তার ফলে এক সময়ের ১২০ ফুট চওরার খোকসা ঘাঘট দখলে, দূষণে এখন পরিণত হয়েছে ২০ থেকে ২৫ ফিটে। তাই সময়ের সাথে বেড়ে যাচ্ছে দুর্ভোগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল হোসেন জানান, খোকসা ঘাঘট নদীর পাশের আমাদের মেস। নদীর পানির গন্ধে রুমে থাকা যায় না। আসছে গরমের মৌসুম গন্ধ আরো বেড়ে যাবে। রুমের দরজা খোলা রাখাই যেনো দায়।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেসে যাচ্ছেন আরেক শিক্ষার্থী সাদমান হাফিজের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এই রাস্তা দিয়ে হাঁটলে নাক বন্ধ করে যেতে হয়। আরো বাতাস থাকলে গন্ধ বেশি দূর ছড়ায়।

রিভারাইন পিপলের পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, ১৯৪০ সালের সিএস রেকর্ড অনুযায়ী খোকসা ঘাঘট একটি সীকৃত নদী। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন একটি ভুল রিপোর্ট প্রকাশ করে খোকসা ঘাঘট নদীকে তালিকাভুক্ত করেনি।

এসময় তিনি আরো বলেন, যেহেতু উজানের নদীগুলোতে প্রচুর ময়লা ফেলা হয়, সেই দূষন খোকসা ঘাঘট নদীকেও দূষন করে। তাছাড়াও নদীতে প্রচুর আবর্জনা ফেলা হয়। যার ফলে নদীর দু-পাশের মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে, সেই সাথে জীব বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। অতিদ্রুত কতৃপক্ষের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

এ ব্যাপারে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সাথে কথা হলে তিনি জানান, শ্যামা সুন্দরীকে উদ্ধারের মাধ্যমে একটি আধুনিক নগরী উপহার দিতে চাই। মেয়র জানান, তিলোত্তমা রংপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠাই আমার লক্ষ্য। এ জন্য শ্যামা সুন্দরী খালের পুরনো অবয়ব ফিরে আনার কোনো বিকল্প নেই। শ্যামা সুন্দরী খালে আবার সেই স্রোতধারা ফিরিয়ে আনা হবে এবং এটি হবে সৌন্দর্যের প্রতীক হবে।

এসময় রসিক শ্যামা সুন্দরী ঘিরে তাদের পরিকল্পনার কথাও জানান, শ্যামা সুন্দরী খাল পুনঃখননের কাজ দুইভাবে করা হবে। প্রথমত খাল খনন ও প্রটেকটিভ ওয়াল নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। আর খালের দুই ধারে পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখলে এর ব্যয় শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এর জন্য আমরা যৌথ কমিটিকে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে।

খোকসা ঘাঘট সম্পর্কে মেয়র জানান, রংপুর মহানগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খোকসা ঘাঘটের ডান তীর থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে কিছু বড় বড় ভবন। এছাড়া ২০ কোটি মূল্যের প্রায় দেড় একর সরকারি জমি উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি বাম তীরের পাঁচ মিটার সার্ভের কাজ এখনো চলমান। তাছাড়াও একদিকে যেমন হাটার রাস্তা ১০ ফুট অন্যদিকে প্রতিবন্ধীদের ৬ ফুট রাস্তা দুই পাশে থাকবে। হবে হাতিরঝিলের আদলে এই শ্যামাসুন্দুরী খালের প্রকৃত রুপ ফিরে আসবে। মন্ত্রালয়ে কাগজপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। দ্রুত তা বাস্তবায়ন হবে বলে জানান সিটি মেয়র মোস্তফা।

নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন, শ্যামা সুন্দরীর ঐতিহ্য ও ইতিহাস রক্ষায় গেল কয়েক বছর ধরে রংপুরের বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে ময়লা আর্বজনার ভাগাড়ে পরিণত হওয়া খোকসা ঘাঘটসহ খালগুলোর দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর দাবি খোকসা ঘাঘট নদীকে নদী রক্ষা কমিশনের তালিকাভুক্ত করে নদীর অস্তিত্ব রক্ষা করে মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করা হোক।

লেখক: রিপন আহমেদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ-১৩ তম ব্যাচ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন